ভারতীয় নাট্যবিদ্যা: নাট্যশাস্ত্রের দর্শন

ধারাবাহিক

পার্থ প্রতিম আচার্য

3/26/20251 min read

নাট্যশাস্ত্রের ঐতিহাসিক উৎপত্তি

নাট্যশাস্ত্র ভারতীয় সংস্কৃতি ও সাহিত্যের অন্যতম প্রাচীন এবং গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ, যা নাটক, নৃত্য ও সংগীতের উপর বিশদ দিকনির্দেশনা প্রদান করে। এটি মূলত সংস্কৃত নাট্যকলার ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হয় এবং ভারতীয় দর্শন ও সমাজের উপর গভীর প্রভাব ফেলেছে।

নাট্যশাস্ত্রের রচয়িতা ও সময়কাল

নাট্যশাস্ত্রের রচয়িতা হিসাবে মহর্ষি ভরত-এর নাম উল্লেখ করা হয়। এটি সাধারণত খ্রিস্টপূর্ব ২০০ BCE থেকে ২০০ CE-এর মধ্যে রচিত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। তবে এটি এককভাবে কোনো নির্দিষ্ট সময়ে রচিত হয়নি, বরং বিভিন্ন সময়ে সংকলিত ও পরিবর্ধিত হয়েছে।

নাট্যশাস্ত্রের ঐশ্বরিক উৎস

নাট্যশাস্ত্রের প্রথম অধ্যায়ে নাট্যের আধ্যাত্মিক উৎপত্তির কাহিনি বর্ণিত হয়েছে। এতে বলা হয়—ত্রেতাযুগে দেবতারা ব্রহ্মার কাছে একটি নতুন বেদ তৈরির অনুরোধ করেন, যা সব মানুষের জন্য উপলব্ধ হবে এবং যা বিনোদনমূলক হলেও শিক্ষণীয় হবে। তখন ব্রহ্মা চারটি বেদ থেকে বিভিন্ন অংশ গ্রহণ করে নতুন এক পঞ্চম বেদ তৈরি করেন, যা হলো নাট্যবেদ

  • ঋগ্বেদ থেকে সংলাপ (পাঠ্য)

  • যজুর্বেদ থেকে অভিনয় (শারীরিক ভঙ্গি)

  • সামবেদ থেকে সংগীত

  • অথর্ববেদ থেকে রস ও অনুভূতি

এই জ্ঞান তিনি মহর্ষি ভরত ও তাঁর শত পুত্রকে প্রদান করেন, যারা এটি মানুষের মধ্যে প্রচার করেন।

নাট্যশাস্ত্রের ঐতিহাসিক বিকাশ

নাট্যশাস্ত্রের ঐতিহাসিক উৎপত্তি সম্পর্কে গবেষকরা মনে করেন যে, এটি ভারতীয় নাট্যকলার একটি সংগৃহীত রূপ। এর উৎস মূলত প্রাক-বৈদিক ও বৈদিক যুগের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান, লোকসংস্কৃতি এবং রাজসভায় পরিবেশিত নৃত্য-গীত-নাট্যের ঐতিহ্যে নিহিত।

  1. বৈদিক যুগ:

বৈদিক যুগের মন্ত্র ও যজ্ঞে নাটকের উপাদান ছিল।

দেবতার গুণগান করা ও কাহিনি পরিবেশন করার রীতি নাট্যশাস্ত্রের প্রাথমিক ভিত্তি গড়ে তোলে।

  1. মহাকাব্যিক যুগ (রামায়ণ ও মহাভারত):

মহাকাব্যিক যুগে নাটকের উপাদান আরও সুসংগঠিত হয়।

মহাভারত ও রামায়ণের কাহিনি পরবর্তী নাট্যধারায় গভীর প্রভাব ফেলে।

  1. মৌর্য ও গুপ্ত যুগ (৪র্থ-৫ম শতাব্দী CE):

এই সময় সংস্কৃত নাটকের স্বর্ণযুগ।

কালিদাস, ভাস, শূদ্রক প্রমুখ নাট্যকাররা নাট্যশাস্ত্রের নিয়ম মেনে নাটক রচনা করেন।

You can mail the writer –