নাট্য আলোচনা: শিল্প তীর্থ প্রযোজনা-পাজি পিটার
Partha Pratim Acharya
1/12/20251 min read


সম্মিলিত নাট্যপ্রয়াসের উদ্যোগে, আজ ১১/১/২০২৫ রবীন্দ্র ভবনের দুই নম্বর হলে মঞ্চস্থ হল নাটক পাজি পিটার। মূল রচনা সুকুমার রায়ের এবং নাট্যরূপ করেছেন সুশান্ত দে। পরিচালনায় ছিলেন ইন্দিরা সরকার। প্রযোজনা: শিল্প তীর্থ শীতের রাতেও দর্শকের উপস্থিতি যথেষ্ট ভালো ছিল, বলা যায়।
গল্প ও নাট্যরূপ
নাট্যকার মূলত কিছু সংযোজন সহ সুকুমার রায়ের মূল গল্পেই আস্থা রেখেছেন।মুল গল্পটি এইরুপ- পিটার নামে এক চালাক ব্যক্তি, যাকে সবাই "পাজি পিটার" বলে ডাকে, তার বুদ্ধি ও প্রতারণার মাধ্যমে রাজাসহ অনেককেই ঠকায়। রাজাকে সে প্রথমে ঘোড়া বিক্রি করে ঠকায়, পরে ভাত রান্নার জাদু পাথর এবং মৃত মানুষ জীবিত করার শিঙ দেখিয়ে আবার প্রতারণা করে। শেষে রাজা তাকে বাক্সে ভরে সমুদ্রে ফেলে দিলেও পিটার চালাকি করে নিজের প্রাণ বাঁচিয়ে ধনী হয়ে ফিরে আসে। রাজা অবাক হয়ে তার কথা বিশ্বাস করেন। গল্পটি বুদ্ধি ও চালাকির জয় এবং লোভের বিপদ তুলে ধরে।
সংযোজন ছিল আধুনিক সময়ের টিভি লাইভ টেলিকাস্ট ধোঁকানো, সংলাপে কিছু মূল্যবান কথার অন্তর্ভুক্তি। কিন্তু দুটি বিষয়ে নাট্যকারকে ভেবে দেখতে বলব।
সুকুমার রায়ের গল্পে পাজি পিটার নিজেকে বাঁচাতে একজন ভিনদেশি তীর্থযাত্রীকে ঠকিয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছিল। তিনি এটাকে যথাযথ রাখায় তীর্থযাত্রীর চরিত্রের poetic justice হলো কি? মনে হয় এই ভাবনাটি নাট্যকারের মাথায়ও ছিল। তাই হয়তো অনেকটা নিজেকে justify করতেই স্বয়ং সুকুমার রায়কে এনে শেষ দৃশ্যে ঢোকালেন।
এই বিষয়টি আবার ভেবে দেখলে আগামী দিনে নাটকটি আরও উন্নত হবে বলে মনে হয়।
মঞ্চ সজ্জা
মঞ্চ সজ্জার কথা বললে, একেবারে আপ-স্টেজে আড়াআড়ি কালো কাপড়ে মোড়া বিশাল প্ল্যাটফর্ম দেখা যায়। ডাউন-স্টেজে দর্শকের বাঁ দিকে আরও একটি আয়তাকার প্ল্যাটফর্ম ছিল। ডান দিকে, সেকেন্ড উইং থেকে একটি আয়তাকার কালো ফ্রেম স্টেজের দিকে এসেছে, যা LIVE TV-এর বেস হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। মঞ্চ সজ্জার সরলতা এবং তার সাথে সাযুজ্য রেখে উপস্থাপনা ভালো লেগেছে।
আলো
৪টি এলইডি লাইট দিয়ে আলোকসজ্জা শুরু হয়েছে। পরবর্তীতে PAR ব্যবহৃত হয়েছে। পাজি পিটারের বাড়ির দৃশ্যের জোনে আলো ছড়িয়ে পড়ে গেছে রাজা যেখানে বসে ছিলেন, সেই চেয়ারটি পর্যন্ত, ফাঁকা মঞ্চ দৃশ্যমান ছিল অন্যদিকে, টিভির দৃশ্যে আলো সঠিক জায়গায় পড়েছে। তবে নাটকের শেষে যেখানে তীর্থযাত্রী পাহাড়ের চূড়ায় বন্দি হচ্ছিলেন, সেখানে স্মোক মেশিন ব্যবহৃত হলেও একটি মাধ্যম না থাকায় ধোঁয়া ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছিল এবং সেই লোকেশনটি সেভাবে প্রতিষ্ঠিত করা যায়নি।
পোশাক ও রূপসজ্জা
পোশাক এবং রূপসজ্জা উভয় ক্ষেত্রেই যথেষ্ট ভালো কাজ হয়েছে। কাহিনীর প্রয়োজন অনুসারে ( মানে নাট্যকার যা লিখেছেন) চরিত্রগুলিকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। পোশাক পরিকল্পনায় রঙের নির্ধারণ নাট্যদলের উদ্দেশ্যকে অনেকটাই ঈঙ্গিতবহ ।
আবহ
আবহতে বিশেষ কোনো অভিনবত্ব না থাকলেও, ঋতিনাভো যেখানেই পিটার কাউকে বোকা বানাচ্ছিল সেইখানে স্টক মিউজিকের সাথে ছাগলের আওয়াজ জুড়ে দিয়ে নাট্যের ভাব বুঝে কাজ করার দিকটি পরিষ্কার হয়েছে। বাকি সবই সিচুয়েশনাল মিউজিক।
অভিনেতা-অভিনেত্রী:
রাজা চরিত্রে - গৌরব বণিক অনেকটা সত্যজিৎ রায়ের রাজার অনুকরণীয়।
পাজি পিটারের চরিত্রে - রূপম বণিক বেশ স্মার্ট, তবে খবরের চ্যানেলের অভিনেতা দ্বয় (রূপম বণিক [ছোট] এবং সুকন্যা দে) ও জ্যোতিক বণিক এবং অবশ্য ই কার্ত্তিক বনিক সবাইকে অল্প অভিনয়ে ছাপিয়ে গেছেন।
পরিচালিকার কাছে প্রত্যাশা:
ইন্দিরা সরকার রাজ্যের নাটকে একটা সুপরিচিত নাম। তার কাছে এই ধরনের গল্প, যা মূলত শিশু-কিশোরদের উদ্দেশ্যে রচিত, তাকে সকল বয়সের মানুষের জন্য প্রস্তুত করা নিশ্চিতভাবেই একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। ইন্দিরা কিন্তু এতগুলো প্রাপ্তবয়স্ককে বসিয়ে গড়গড়িয়ে নাটকটিকে বের করে নিলেন।
উল্লেখযোগ্য দিক:
কিছু অতি সংক্ষিপ্ত দৃশ্য কমানো যায় কিনা ভাবা যেতে পারে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো নবপ্রজন্মের একেবারে কম বয়সের একঝাক শিল্পীদের নিয়ে পরিচালক যতটুকু কাজ করেছেন, তার জন্য ইন্দিরাকে ধন্যবাদ। আগামী দিনে তোমার হাত থেকে বেরিয়ে আসুক আরও নতুন নতুন অভিনেতা এবং আরও ভালো ভালো নাটক।
ধন্যবাদ।©
